কম খরচে ভ্রমণের জন্য সেরা ৫টি দেশ

ভ্রমণ মানুষের জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা। নতুন জায়গা দেখা, ভিন্ন সংস্কৃতি জানা আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার মাধ্যমে মন ও মস্তিষ্ক দুটোই প্রফুল্ল হয়। তবে অনেক সময় ভ্রমণের খরচের কারণে অনেকেই ভ্রমণের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন না।

কম-খরচে-ভ্রমণের-জন্য-সেরা-৫টি-দেশ
 আসলে সঠিক পরিকল্পনা আর কিছু কৌশল জানলে খুব বেশি খরচ ছাড়াই দারুণ ভ্রমণ উপভোগ করা সম্ভব। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ ও শহর আছে, যেখানে স্বল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী খাবার আর সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা পাওয়া যায়। তাই বাজেট-ভ্রমণ এখন ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এক জনপ্রিয় ধারণা হয়ে উঠেছে। সামান্য অর্থ খরচ করেই ঘুরে দেখা যায় পাহাড়, সমুদ্র, ঐতিহাসিক নিদর্শন কিংবা আধুনিক নগরী। অর্থাৎ, ভ্রমণ কেবল ধনী বা বিলাসপ্রেমীদের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, বরং কম বাজেটেও তা হতে পারে সবার নাগালে।

কম খরচে ভ্রমণের জন্য পাকিস্তানের লাহোর – পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এখানে লাহোর ফোর্ট, বাদশাহী মসজিদ, শালিমার গার্ডেন আর পুরনো শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনা ঘুরে দেখতে পারেন। করাচি – সমুদ্রতীরবর্তী শহর। ক্লিফটন বিচ, পাকিস্তান মেরিটাইম মিউজিয়াম আর খাবারের জন্য বিখ্যাত।ইসলামাবাদ – আধুনিক রাজধানী শহর। এখানে ফয়সাল মসজিদ, দামান-ই-কোহ ভিউ পয়েন্ট, পাকিস্তান মনুমেন্ট দর্শনীয়।

মুর্রি – পাহাড়ি শহর, যাকে পাকিস্তানের "কুইন অব হিলস" বলা হয়। বরফে ঢাকা পাহাড়, কেবল কার আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।হুনজা ভ্যালি – উত্তর পাকিস্তানের স্বপ্নের মতো এক জায়গা। তুষারাবৃত পাহাড়, লেক আর সবুজ উপত্যকার জন্য এটি বিশ্বজোড়া পরিচিত।স্কার্দু – কারাকোরাম পর্বতমালা আর বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম পর্বত কে-টু এর বেস ক্যাম্প এখানেই। প্রকৃতি আর ট্রেকিংপ্রেমীদের জন্য স্বর্গ। মুলতান – পাকিস্তানের "সিটি অব সেন্টস"। ঐতিহাসিক মাজার, কার্পেট আর ব্লু সিরামিকের জন্য বিখ্যাত।

থাকা-খাওয়ার খরচ-: পাকিস্তানে বাজেট হোটেল বা গেস্টহাউস দিনে ৮–১৫ ডলার (প্রায় ৮০০–১২০০ টাকা) খরচেই পাওয়া যায়। ইসলামাবাদ ও লাহোরে কিছুটা বেশি হলেও মুর্রি, হুনজা বা স্কার্দুতে গেস্টহাউস খুবই সাশ্রয়ী।

 

কম খরচে ভ্রমণের জন্য ভিয়েতনামের দর্শনীয় স্থান কম খরচে ভ্রমণের জন্য ভিয়েতনামের হ্যানয় (Hanoi) – রাজধানী শহর। ওল্ড কোয়ার্টার, হোয়ান কিয়েম লেক, হো চি মিন মাউসোলিয়াম এবং টেম্পল অব লিটারেচার ঘোরার মতো স্থান। হা লং বে (Ha Long Bay) – ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। পান্না সবুজ পানির ওপর চুনাপাথরের পাহাড় আর নৌকা ভ্রমণ এখানে দারুণ অভিজ্ঞতা। 

কম-খরচে-ভ্রমণের-জন্য-সেরা-৫টি-দেশ

দা নাং (Da Nang) – সুন্দর সমুদ্রসৈকত ও আধুনিক শহর। কাছাকাছি আছে “গোল্ডেন ব্রিজ” যেটি বিশাল পাথরের হাত দ্বারা ধরে রাখা। হোই আন (Hoi An) – ছোট্ট প্রাচীন শহর, যেটি লণ্ঠনের আলো আর নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। সাপা (Sapa) – উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি শহর। ধানক্ষেত, পাহাড়ি উপজাতি গ্রাম আর ট্রেকিং এর জন্য জনপ্রিয়।নাহা ট্রাং (Nha Trang) – সৈকত শহর, যেখানে সস্তা রিসোর্ট আর ওয়াটার স্পোর্টস উপভোগ করা যায়।

থাকা ও খাওয়ার খরচ সম্পকির্ত তথ্য

থাকা : ভিয়েতনামে বাজেট হোস্টেল বা গেস্টহাউস দিনে ৮–১৫ ডলার (প্রায় ৮০০–১২০০ টাকা) খরচেই পাওয়া যায়। হ্যানয় বা হো চি মিন সিটির মতো বড় শহরে খরচ কিছুটা বেশি হলেও এখনও সাশ্রয়ী।

খাওয়া : স্ট্রিট ফুড খুবই জনপ্রিয় এবং সস্তা। বিখ্যাত “ফো (Pho)” নুডল স্যুপ বা বান মি (Banh Mi) স্যান্ডউইচ মাত্র ১–২ ডলারে (৮০–১৫০ টাকা) খাওয়া যায়। রেস্টুরেন্টে খেলে ২–৪ ডলারের মধ্যে ভালো খাবার পাওয়া সম্ভব।

পরিবহন : লোকাল বাস ও শেয়ারড ট্যাক্সি খুব সস্তা। শহরের মধ্যে মোটরবাইক ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারেন (প্রতিদিন ৫–৭ ডলার)। শহর থেকে শহরে যাওয়ার জন্য নাইট বাস বা ট্রেন খুবই বাজেট-ফ্রেন্ডলি।খাওয়া : রাস্তার ধারের খাবার খুবই জনপ্রিয় ও সস্তা। এক প্লেট বিরিয়ানি বা কাবাব ১০০–২০০ পাকিস্তানি রুপিতে (প্রায় ৭০–১৪০ টাকা) পাওয়া যায়। স্থানীয় রেস্টুরেন্টে খেলে ২০০–৪০০ রুপির মধ্যেই একবেলা খাবার সেরে নেওয়া যায়।

পরিবহন : শহরের মধ্যে লোকাল বাস, রিকশা বা শেয়ারড ট্যাক্সি খুবই সস্তা। এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতে বাস বা ট্রেনে ৫০০–১০০০ রুপির মধ্যে ভ্রমণ করা যায়।

কম খরচে ভ্রমণের জন্য থাইল্যান্ডের দর্শনীয়স্থান ব্যাংকক (Bangkok) – রাজধানী শহর। গ্র্যান্ড প্যালেস, ওয়াট ফো (শায়িত বুদ্ধের মন্দির), ওয়াট অরুণ, ফ্লোটিং মার্কেট আর নাইট মার্কেট ঘোরার মতো স্থান।

চিয়াং মাই (Chiang Mai) – পাহাড়ি শহর, যেখানে শত শত প্রাচীন মন্দির, নাইট বাজার আর ট্রেকিং-এর সুযোগ আছে।

ফুকেট (Phuket) – সমুদ্রসৈকতের জন্য বিখ্যাত। পাতং বিচ, ফি ফি আইল্যান্ড ট্যুর, জঙ্গল সাফারি ও স্নরকেলিং ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে।

পাতায়া (Pattaya) – সমুদ্রতীরবর্তী শহর, যেটি নাইটলাইফের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া কোরাল আইল্যান্ড ঘুরতে যাওয়া যায়।

ক্রাবি (Krabi) – সুন্দর সৈকত, চুনাপাথরের পাহাড় আর ছোট ছোট দ্বীপের জন্য জনপ্রিয়। এখানে নৌকা ভ্রমণ বিশেষ আকর্ষণ।

আয়ুথায়া (Ayutthaya) – ব্যাংককের কাছাকাছি অবস্থিত প্রাচীন রাজধানী শহর। পুরনো মন্দির ও ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ দেখতে পারবেন।

থাকা ও খাওয়ার খরচ সম্পকির্ত তথ্য

থাকা : থাইল্যান্ডে বাজেট হোস্টেল বা গেস্টহাউস দিনে ১০–১৫ ডলার (প্রায় ১০০০–১২০০ টাকা) খরচেই পাওয়া যায়। মাঝারি মানের হোটেল ২০–৩০ ডলার।

খাওয়া : থাই স্ট্রিট ফুড খুব জনপ্রিয় এবং সস্তা। এক প্লেট ফ্রাইড রাইস বা নুডলস ১.৫–২ ডলার (প্রায় ১৫০ টাকা) খরচেই খাওয়া যায়। রেস্টুরেন্টে খেলে ৩–৫ ডলার (২৫০–৪০০ টাকা) খরচ হবে।

পরিবহন : ব্যাংককে মেট্রো ও বাস খুব সস্তা। শহরের মধ্যে টুকটুক বা মোটরবাইক ট্যাক্সিও জনপ্রিয়। দূরপাল্লার যাত্রায় বাস বা ট্রেন খরচ বাঁচাতে সাহায্য করবে।

  

কম খরচে ভ্রমণের জন্য শ্রীলঙ্কার দর্শনীয় স্থান কলম্বো (Colombo) – আধুনিক রাজধানী শহর। গঙ্গারামায়া মন্দির, গলে ফেস গ্রিন, ন্যাশনাল মিউজিয়াম ও পেত্তাহ মার্কেট ভ্রমণকারীদের আকর্ষণ করে।

ক্যান্ডি (Kandy) – পাহাড়ি শহর, যেখানে বিখ্যাত “Temple of the Tooth” অবস্থিত। শহরের চারপাশে চা বাগান আর লেক ভ্রমণযোগ্য।

নুয়ারা এলিয়া (Nuwara Eliya) – চা বাগান ও ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য জনপ্রিয়। হর্টন প্লেইনস ন্যাশনাল পার্ক ও ওয়ার্ল্ডস এন্ড ভিউপয়েন্ট অবশ্যই দেখার মতো।

সিগিরিয়া (Sigiriya Rock Fortress) – ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা বিশাল পাথরের ওপর তৈরি দুর্গ।

গলে (Galle) – সমুদ্রতীরবর্তী ঐতিহাসিক শহর। গলে ফোর্ট ও ডাচ-শৈলীর স্থাপত্য বিখ্যাত।

এলা (Ella) – পাহাড়ি শহর, যেখানে চা বাগান, নয়নাভিরাম রেলপথ ও লিটল অ্যাডামস পিক ঘুরে দেখা যায়।

বেন্টোটা ও মিরিসা (Bentota & Mirissa) – সুন্দর সমুদ্রসৈকত, স্নরকেলিং, ডলফিন ও তিমি দেখার জন্য জনপ্রিয়।

থাকা ও খাওয়ার খরচ সম্পকির্ত তথ্য

থাকা : বাজেট গেস্টহাউস বা হোস্টেলে প্রতিদিন ১০–১৫ ডলার (প্রায় ১০০০–১২০০ টাকা) খরচ হয়। মাঝারি মানের হোটেল ২০–৩০ ডলারের মধ্যে।

খাওয়া : স্থানীয় রেস্টুরেন্টে একবেলা খাবার ২–৪ ডলার (প্রায় ২০০–৩৫০ টাকা) খরচে পাওয়া যায়। জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে আছে রাইস অ্যান্ড কারি, হপ্পারস (এক ধরনের প্যানকেক), ও রোটি।

পরিবহন : লোকাল বাস ও ট্রেন খুবই সস্তা। উদাহরণস্বরূপ, ক্যান্ডি থেকে এলা পর্যন্ত বিখ্যাত ট্রেন ভ্রমণ মাত্র ২–৩ ডলার খরচে করা যায়। শহরের মধ্যে টুকটুকও ব্যবহার করতে পারেন।

  

কম খরচে ভ্রমণের জন্য নেপালের দর্শনীয় স্থান কাঠমান্ডু (Kathmandu) – রাজধানী শহর। দরবার স্কয়ার, পশুপতিনাথ মন্দির, স্বয়ম্ভুনাথ (বানর মন্দির) এবং বৌদ্ধনাথ স্তূপা দেখার মতো জায়গা।

পোখরা (Pokhara) – শান্ত হ্রদের শহর। ফেওয়া লেক, দেভিস ফলস, বিশ্ব শান্তি প্যাগোডা এবং অন্নপূর্ণা পাহাড়ের দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

নাগরকোট (Nagarkot) – কাঠমান্ডুর কাছাকাছি একটি পাহাড়ি স্থান, যেখান থেকে হিমালয়ের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অসাধারণ লাগে।

লুম্বিনী (Lumbini) – গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান। এখানে মায়া দেবী মন্দির ও নানা দেশের তৈরি বৌদ্ধ মঠ দেখা যায়।

চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক (Chitwan National Park) – বন্যপ্রাণী ও জঙ্গল সাফারির জন্য বিখ্যাত। এখানে হাতি, গণ্ডার ও বাঘ দেখার সুযোগ আছে।

এভারেস্ট রিজিয়ন (Everest Region) – অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য ট্রেকিংয়ের স্বর্গ। তবে খরচ তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি।

থাকা ও খাওয়ার খরচ সম্পকির্ত তথ্য

থাকা : বাজেট হোস্টেল বা গেস্টহাউসে প্রতিদিন ৮–১৫ ডলার (প্রায় ৮০০–১২০০ টাকা) খরচে থাকা যায়। মাঝারি মানের হোটেল ২০–৩০ ডলারের মধ্যে পাওয়া যায়।

খাওয়া : স্থানীয় রেস্টুরেন্টে সাধারণ খাবার ২–৪ ডলারের (২০০–৩৫০ টাকা) মধ্যে পাওয়া যায়। জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে আছে ডাল-ভাত-তরকারি, মোমো (ডাম্পলিংস), চাউমিন ইত্যাদি।

পরিবহন : লোকাল বাস ও ট্যাক্সি খুবই সস্তা। কাঠমান্ডু থেকে পোখরা বাসে যেতে ৮–১০ ডলারের বেশি লাগে না।

শেষ কথা 

হোস্টেল বা গেস্টহাউসে থাকলে খরচ অনেক কমবে। রাস্তার পাশের ছোট রেস্টুরেন্টে খাবার খেলে খরচ অর্ধেক কমে যাবে। ট্যাক্সির পরিবর্তে লোকাল বাস ব্যবহার করুন। ট্রেকিং করলে স্থানীয় গাইড নিলে সাশ্রয়ী হয়, তবে আগে দরদাম করুন। সুভেনির কেনার সময় দরদাম করতে ভুলবেন না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url