ডায়াবেটিক কি এবং ডায়াবেটিক কেন হয়


ডায়াবেটিসের কারণে আমাদের সবার দৈনন্দিন জীবনের শারীরিক অক্ষমতা দেখা যায় যেমন কিডনি নষ্ট হয় চোখ নষ্ট হয় শরীরের ব্যথা বেদনা শুরু হয়।,ডায়াবেটিস (Diabetes) হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী (ক্রনিক) রোগ যেখানে রক্তে গ্লুকোজ (শর্করা/চিনি) স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে।

আমাদের শরীর খাবার থেকে কার্বোহাইড্রেট ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি করে, যা শক্তি হিসেবে ব্যবহার হয়।এই গ্লুকোজ রক্ত থেকে কোষে পৌঁছে দেয়ার কাজ করে ইনসুলিন নামক হরমোন, যা অগ্ন্যাশয় (Pancreas) থেকে তৈরি হয়। ডায়াবেটিসে শরীরে দুই ধরনের সমস্যা হতে পারে: ইনসুলিন ঠিকমতো তৈরি না হওয়া। অন্যটি হলো কোষগুলো ইনসুলিন ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারা (ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স)। ফলস্বরূপ গ্লুকোজ রক্তে জমে থাকে এবং কোষগুলো শক্তি পায় না।

ডায়াবেটিকস এর ধরণ বেশ কয়েকটি । ডায়াবেটিস মূলত তিন ধরনের:

ধরণ- ১ ডায়াবেটিস। শরীরে একেবারেই ইনসুলিন তৈরি হয় না। এটি সাধারণত শিশু বা কিশোর বয়সে দেখা দেয়।এটি ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়।

ধরণ ২ ডায়াবেটিস। শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা কোষ ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি হয়, তবে শিশুদেরও হতে পারে। নিয়ন্ত্রিত ডায়েট, ব্যায়াম ও ওষুধে সামাল দেওয়া যায়। 

ধরন ৩ গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes) গর্ভাবস্থায় দেখা দেয়। সাধারণত সন্তান জন্মের পর কমে যায়, তবে ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।


ডায়াবেটিসের সাধারণ উপসর্গ যেমন-ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। অতিরিক্ত পিপাসা লাগা অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা অযাচিত ওজন কমে যাওয়া। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া। ক্ষত শুকাতে সময় লাগা। ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা।

জটিলতা-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এটি হার্ট, কিডনি, চোখ, স্নায়ু এবং রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে।

ডায়াবেটিস (Diabetes) যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে রক্তে অতিরিক্ত শর্করা (গ্লুকোজ) ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করতে পারে।

এগুলোকে সাধারণত ডায়াবেটিসের জটিলতা (Complications) বলা হয়।

নিচে প্রধান ক্ষতিগুলো তুলে ধরা হলো:

 ১. হৃদরোগ ও রক্তনালী সমস্যা উচ্চ রক্তশর্করা রক্তনালী ও ধমনীতে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ এবং ধমনী ব্লক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

২. কিডনি ক্ষতি (Diabetic Nephropathy) দীর্ঘদিন শর্করা বেশি থাকলে কিডনির ক্ষুদ্র ফিল্টার নষ্ট হয়। এর ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে কিডনি ফেইলিওর পর্যন্ত হতে পারে। অনেক রোগীকে ডায়ালাইসিস বা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয়।

৩. চোখের ক্ষতি (Diabetic Retinopathy) রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চোখের রেটিনাতে সমস্যা হয়। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা, চোখে রক্তক্ষরণ, এমনকি অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া ছানি (Cataract) ও গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

৪. স্নায়ুর ক্ষতি (Diabetic Neuropathy) হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া, ঝিনঝিন বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হওয়া। পায়ের অনুভূতি কমে গেলে ক্ষত বা ফোঁড়া সহজে বোঝা যায় না। ক্ষত থেকে সংক্রমণ হতে পারে, যা মারাত্মক হলে পা কেটে ফেলতে (Amputation) হতে পারে।

৫. দাঁত ও মাড়ির সমস্যা অতিরিক্ত চিনি মাড়িতে সংক্রমণ ঘটায়। দাঁতের গোড়া নরম হয়ে দাঁত পড়তে পারে।

৬. ত্বকের সমস্যা ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, চুলকানি ও ক্ষত শুকাতে দেরি হয়।

৭. যৌন ও প্রজনন সমস্যা পুরুষদের মধ্যে যৌন দুর্বলতা (Erectile Dysfunction) হতে পারে। নারীদের মধ্যে সংক্রমণ ও মাসিকের অনিয়ম দেখা দিতে পারে।

৮. পায়ের সমস্যা পায়ের ক্ষত বা ঘা শুকাতে দেরি হয়। সঠিক যত্ন না নিলে ডায়াবেটিক ফুট হয়ে পা কেটে ফেলতে হতে পারে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url